Header Ads Widget

Ticker

6/recent/ticker-posts

সূরা লোক্‌মান (لقمان), আয়াত: ৬ religions of the world

 

religions of the world
religions of the world

সূরা লোক্‌মান (لقمان), আয়াত: ৬

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَّشْتَرِىْ لَهْوَ الْحَدِيْثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيْلِ  اللّٰهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ‌ۖ وَّيَتَّخِذَهَا هُزُوًا ‌ؕ اُولٰٓٮِٕكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ

উচ্চারণঃ ওয়া মিনান্না-ছি মাইঁ ইয়াশতারী লাহওয়াল হাদীছিলিইউদিল্লা ‘আন ছাবীলিল্লা-হি বিগাইরি ‘ইলমিওঁ ওয়া ইয়াত্তাখিযাহা-হুঝুওয়ান উলাইকা লাহুম ‘আযা-বুম মুহীন।

অর্থঃ একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।

وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّشۡتَرِیۡ لَہۡوَ الۡحَدِیۡثِ لِیُضِلَّ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ ٭ۖ وَّ یَتَّخِذَہَا ہُزُوًا ؕ اُولٰٓئِکَ لَہُمۡ عَذَابٌ  مُّہِیۡنٌ ﴿۶﴾

৬-৭ নং আয়াতের তাফসীর: প্রথমে আল্লাহ তা‘আলা সৎ লোদেকর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করার পর এ আয়াতগুলোতে অসৎ লোকদের অসৎ কার্যকলাপের বিবরণ তুলে ধরেছেন। সৎ লোকেরা কুরআন দ্বারা উপকৃত হয় কিন্তু এ সকল অসৎ লোকেরা যারা আল্লাহ তা‘আলার কুরআন শ্রবণ করা থেকে দূরে থাকে বরং অনর্থক কথাবার্তা ইত্যাদি খুব একাগ্রতার সাথে শোনে এবং তাতে বড় আগ্রহী হয় তারা কুরআন থেকে উপকৃত হতে পারে না। (لَهْوَ الْحَدِيْثِ) বলতে গান-বাজনা ও এ জাতীয় সামগ্রী যা মানুষকে আল্লাহ তা‘আলার স্মরণ থেকে উদাস করে রাখে তা বুঝানো হয়েছে। আলোচ্য আয়াতটি একটি বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষাপটে নাযিল হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। মক্কার মুশরিক ব্যবসায়ী নযর বিন হারেস ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশে সফর করত। সে একবার পারস্য থেকে কেসরা প্রমুখ আজমী সম্রাটগণের ঐতিহাসিক কাহিনীর বই ক্রয় করে আনল এব্ং মক্কার মুশরিকদেরকে বলল, মুহাম্মাদ তোমাদেরকে আ‘দ, সামূদ প্রভৃতি সম্প্রদায়ের কিসসা কাহিনী শোনায়। আমি তোমাদেরকে রুস্তম, ইসফেন্দিয়ার প্রমুখ পারস্য সম্রাটগণের সেরা কাহিনী শুনাই। মক্কার মুশরিকরা অত্যন্ত আগ্রহের সাথে আনীত কাহিনী শুনতে থাকে। কারণ এগুলোতে শিক্ষা বলতে কিছু ছিল না বরং এগুলো ছিল চটকদার গল্পগুচ্ছ। এর ফলে অনেক মুশরিক, যারা এর আগে ক্রুআনের অলৌকিকতা ও অদ্বিতীয়তার কারণে একে শোনার আগ্রহ পোষণ করত এবং গোপনে গোপনে শুনতো ও তারা কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার ছুতো পেয়ে গেল। (রুহুল মা‘আনী) নাযিলের প্রেক্ষাপট যাই হোক, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল প্রত্যেক সেসব কথা যা হারাম, অনর্থক ও বাতিল যা মানুষকে কুফরী, পাপ কাজ ও আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতার দিকে নিয়ে যায়। সুতরাং গীবত, পরনিন্দা, মিথ্যা কথা, গালি-গালাজ করা, গান-বাজনা ও তৎসদৃশ সকল কথা ও কাজ শামিল। কেননা গান-বাজনার মাঝে কোন প্রকার উপকার-ই নেই, বরং তা মানুষকে পাপ কাজে উৎসাহিত করে এবং আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য ও শরীয়ত গর্হিত কাজে ধাবিত করে। এখানে ক্রয় করার অর্থ হচ্ছে, গান-বাজনা শোনার উদ্দেশ্যে সে সব সামগ্রী যেমন রেডিও, টিভি, সিডি, ডিভিডি ইত্যাদি ক্রয় করে নিয়ে আসা এবং তৃপ্তি সহকারে তার সুর ও ঝঙ্কার উপভোগ করা। তবে এসব দ্বারা ভাল কোন কিছু শুনে উপকৃত হওয়ার জন্য ক্রয় করলে অপরাধ হবে না । অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও মুফাসসিরগণের মতে গান, বাদ্যযন্ত্র ও অনর্থক কিসসা কাহিনীর যেসব বস্তু মানুষকে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত থেকে গাফেল রাখে সেগুলো সবই (لَهْوَ الْحَدِيْثِ) ইবনু আব্বাস, ইবনু মাসঊদ (رضي الله عنه)-সহ প্রমুখ সাহাবীগণ বলেছেন: এ আয়াতটি গান বাজনার ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর) সহীহ বুখারী ও ইমাম বায়হাকী স্ব-স্ব গ্রন্থে এর এ তাফসীরই উল্লেখ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে অনেকে এ উদ্দেশ্যে গায়িকা ক্রয় করত যে, যাতে সে গান শুনিয়ে লোকদের মন জয় করতে এবং কুরআন ও ইসলাম থেকে দূরে রাখতে পারে। এ অর্থে গায়ক-গায়িকা, নায়ক-নায়িকাও এসে যায়। বর্তমানে যারা শিল্পী, ফিল্মী তারকা বা সংস্কৃতির শিল্পী তারাও ঐ (لَهْوَ الْحَدِيْثِ) বা অসার জিনিসেরই অন্তর্ভুক্ত। এর দ্বারা তারা কুরআনুল কারীমের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করে থাকে। সুতরাং যারাই এ সকল কাজে লিপ্ত হবে তাদের জন্যই থাকবে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। ক্রীড়া-কৌতুক ও গান-বাজনা এবং এ সবের সরঞ্জামাদি সম্পর্কে শরীয়তের বিধান: গান-বাজনা করা ও গান-বাজনা শোনা যেমন হারাম তেমনি তার সরঞ্জামাদি ক্রয়-বিক্রয় করাও হারাম। তবে যেসব কথা ও সংগীত উপকারী, দীনের দিকে আহ্বান, শত্র“দের বিরুদ্ধে মুসলিমদেরকে অনুপ্রাণিত করে ও পরকালমুখী করে তা বৈধ। যেমন হাসসান বিন সাবেত শত্র“দের বিরুদ্ধে কবিতা বলে মুসলিমদেরকে উৎসাহিত করতেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪১২৩, ৩২১২, সহীহ মুসলিম হা: ২৪৮৫) আর তিন প্রকার খেলা শরীয়তে বৈধ ১. তীর নিক্ষেপ তথা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ প্রশিক্ষণ নেয়া, ২. কুস্তী খেলা এবং ৩. দৌড় প্রতিযোগিতা। (সহীহ মুসলিম ও আবূ দাঊদ ) এ ছাড়া সকল প্রকার খেল-তামাশা যাতে ধর্মীয় ও পার্থিব উপকারিতা নেই তা ইসলামে অনুমতি নেই। এসবই অসার ও অনর্থক। আর অনর্থক কাজ থেকে একজন মু’মিন সর্বদা দূরে থাকবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ) “যারা অসার ক্রিয়াকলাপ হতে বিরত থাকে” (সূরা মু’মিনূন ২৩:৩) এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন: এ সকল লোকদের সম্মুখে যখনই কুরআন ও আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনাবলীর আলোচনা করা হয় তখনই তারা দম্ভভরে মুখ ফিরিয়ে নেয়। যেন তারা কিছুই শুনতে পায়নি। তাদের কর্ণ যেন বধির, সুতরাং তাদের জন্যই থাকবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: (وَيْلٌ لِّكُلِّ أَفَّاكٍ أَثِيْمٍ يَّسْمَعُ اٰيٰتِ اللّٰهِ تُتْلٰي عَلَيْهِ ثُمَّ يُصِرُّ مُسْتَكْبِرًا كَأَنْ لَّمْ يَسْمَعْهَا ج فَبَشِّرْهُ بِعَذَابٍ أَلِيْمٍ وَإِذَا عَلِمَ مِنْ اٰيَاتِنَا شَيْئَا نِاتَّخَذَهَا هُزُوًا ط أُولٰ۬ئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ ط مِنْ وَّرَا۬ئِهِمْ جَهَنَّمُ ج وَلَا يُغْنِيْ عَنْهُمْ مَّا كَسَبُوْا شَيْئًا وَّلَا مَا اتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ أَوْلِيا۬ءَ ج وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيْمٌ) “দুর্ভোগ প্রত্যেক ঘোর মিথ্যাবাদী পাপীর, যে আল্লাহর আয়াতের তেলাওয়াত শোনে অথচ অহংকারের সাথে অটল থাকে যেন তা সে শোনেনি। তাকে সুসংবাদ দাও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির। যখন আমার কোন আয়াত সে অবগত হয় তখন সে তা ঠাট্টা-বিদ্রƒপচ্ছলে গ্রহণ করে। তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। তাদের পশ্চাতে রয়েছে জাহান্নাম; তাদের কৃতকর্ম তাদের কোন কাজে আসবে না, তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে অভিভাবক স্থির করেছে তারাও নয়। তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।” (সূরা জাসিয়াহ ৪৫:৭-১০) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন: (وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِاٰيٰتِ رَبِّه۪ فَأَعْرَضَ عَنْهَا وَنَسِيَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ ط إِنَّا جَعَلْنَا عَلٰي قُلُوْبِهِمْ أَكِنَّةً أَنْ يَّفْقَهُوْهُ وَفِيْٓ اٰذَانِهِمْ وَقْرًا ط وَإِنْ تَدْعُهُمْ إِلَي الْهُدٰي فَلَنْ يَّهْتَدُوْآ إِذًا أَبَدًا)‏ “কোন ব্যক্তিকে তার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর সে যদি তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায় তবে তার অপেক্ষা অধিক জালিম আর কে? আমি তাদের অন্ত‎রের ওপর আবরণ দিয়েছি যেন তারা কুরআন বুঝতে না পারে এবং তাদের কানে বধিরতা বদ্ধমূল করে দিয়েছি। তুমি তাদেরকে সৎ পথে আহ্বান করলেও তারা কখনও সৎ পথে আসবে না।” (সূরা কাহফ ১৮:৫৭) অতএব সকল প্রকার গান-বাজনা ও অসার কথাবার্তা থেকে দূরে থাকবে হবে। মু’মিন কখনো অসার কার্যকলাপ ও কথা-বার্তায় জড়িত হতে পারে না।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মাল্টিমিডিয়াসংশ্লিষ্ট কিছু অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার জন্য ক্রয় করা হারাম। তবে শর্তসাপেক্ষে ভাল কাজে ব্যবহার ও ক্রয়-বিক্রয় বৈধ রয়েছে। ২. মানুষকে আল্লাহ তা‘আলার পথ থেকে বাধা দেয় এমন সব কার্যকলাপ হারাম। ৩. গর্ব-অহঙ্কার করা কবীরা গুনাহ। ৪. গান-বাজনা শোনা ও শোনানো এবং তার দ্বারা অর্জিত সমস্ত সম্পদ হারাম। তবে যে সব কথা ও কবিতা উপকারী, কোন প্রকার শির্ক ও অনর্থক কথা নেই তা বলা বৈধ।

#Islam
#religions_of_the_world
#tafsirquran
#Tafsir_Quran
#Islam_of_religions_in_world
#Quran

Post a Comment

0 Comments